শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স : ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজারে ‘স্যামসাং’ একটি জনপ্রিয় ও শীর্ষস্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমান সময়ে নিত্য নতুন স্বতন্ত্র উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটি বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব দখলে রাখলেও শুরুর দিকে জাপানি ইলেকট্রনিক্স কোম্পানীগুলোর পণ্য নকল করে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। তবে চায়না কোম্পানিগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পরবর্তীতে স্বতন্ত্র পণ্য উদ্ভাবনে মনোযোগী হন স্যামসাং এবং তার ফল বর্তমান সময়ে এসে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক্স ব্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স এর আরও অনেক জানা-অজানা তথ্য এই পেজটিতে তুলে ধরা হয়েছে।
শুরুর দিকের কথা : শুনলে অবাক হবেন যে, প্রতিষ্ঠার প্রথম তিন দশক কোনো ইলেকট্রনিক পণ্যের আশপাশেই ছিল না প্রতিষ্ঠানটি। স্যামস্যাং শুরুতে করত মুদি পণ্যের পরিবহন ব্যবসা। লি বায়াং-চুল। এই মানুষটি ছাড়া স্যামসাংয়ের গল্প অপূর্ণই থেকে যাবে! আজকের বিশ্বখ্যাত ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাতা স্যামসাংয়ের জন্ম লি বায়াংয়ের হাতেই। লির জন্ম ১৯১০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি, দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংসাঙের শহর ইউরিয়ংয়ের এক ধনাঢ্য পরিবারে। পড়তে গিয়েছিলেন টোকিওর ওয়াসেডা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। বাবার অকালপ্রয়াণে দ্রুতই নেমে পড়তে হয় পারিবারিক ব্যবসায়। ব্যবসায়িক জীবন শুরু চালকল দিয়ে। গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে ১৯৩৮ সালের ১ মার্চ। লি ব্যবসার ধরন পাল্টান। দক্ষিণ কোরিয়ার দায়েগু শহরে প্রতিষ্ঠা করেন নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্যামসাং ট্রেডিং কোম্পানি। তখনকার লোগো থেকে জানা যায়, ‘স্যামসাং’-এর অর্থ ‘তিন তারকা’। বিশাল, সমৃদ্ধ ও ক্ষমতাশালী অর্থেই প্রতিষ্ঠানের এমন নামকরণ। তবে প্রতিষ্ঠানটি তখনো ছোট কলেবরে। কাজ করতেন সাকল্যে ৪০ কর্মী। হয়তো তখনই নিজেদের ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলেন লি। এ কারণেই অমন নামকরণ! শুরুতে প্রতিষ্ঠানটি পণ্য পরিবহনের কাজেই সীমাবদ্ধ ছিল। মূলত শহরের ভেতর মুদিখানার পণ্য পরিবহন করত স্যামসাং। সঙ্গে নিজেরা উৎপাদন করত নুডলস। একপর্যায়ে দেশের সীমানা ছাড়াল তারা। ১৯৪৭ সালে লি সিদ্ধান্ত নিলেন, প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থানান্তর করবেন। স্যামসাংয়ের নতুন ঠিকানা হলো সিউলে। এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রেশ না কাটতে আবারও বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা। শুরু হলো কোরীয় যুদ্ধ। চলল তিন বছর—২৫ জুন ১৯৫০ থেকে ২৭ জুলাই ১৯৫৩। এ সময় লি বাধ্য হলেন সিউল ছাড়তে। তবে যুদ্ধবিগ্রহ তাঁকে দমাতে পারেনি। বুসানে গিয়ে শুরু করলেন চিনি শোধনাগারের ব্যবসা। এ প্রতিষ্ঠানের নাম চেল জেদাং (আজকের বিশ্বখ্যাত সিজে করপোরেশন)। যুদ্ধ শেষে ১৯৫৪ সালে দায়েগুতে লি প্রতিষ্ঠা করলেন কাপড়ের কল ‘চেল মোজিক’। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পশমি কল। দিন যত গড়িয়েছে, স্যামসাং তার ব্যবসার পরিধি ততই বাড়িয়েছে। খাদ্য, বস্ত্র, বিমা প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্যামসাং নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে।
স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স এর যাত্রা : স্যামসাং এর শুরুটা হয় আশির দশকে দক্ষিণ কোরিয়ায়। সময়টা ছিল ১৯৬৯ সাল। সে সময় ‘স্যামসাং ইলেকট্রিক ইন্ড্রাস্টিজ’ নামে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে ‘স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। আগেই বলেছি স্যামসাং প্রথম দিকে জাপানী ইলেকট্রনিক্স কোম্পানীগুলোর পণ্য নকল করে বাজারজাত করত। ১৯৭০ সালে তৈরি করে পি-৩২০২ মডেলের সাদা-কালো টেলিভিশন। টেলিভিশনটি বাজারে আসে ১৯৭২ সালে। এরপর ইলেকট্রনিকস দুনিয়ায় নিজেদের অবস্থান ক্রমেই পোক্ত করে স্যামসাং। শুরুর দিকে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স কিভাবে কোন পণ্য বাজারে ছাড়া যায় তার জন্য জাপানি সনি ও প্যানাসনিক এর ভালোমানের পণ্যগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে স্যামসাংয়ের প্রকৌশলীরা তা অনুকরণ করে এবং সেই মোতাবেক কম দামে সেই একই ধরনের পণ্য বাজারজাত করতে শুরু করে। যা বর্তমানে চায়না কোম্পানিগুলো করছে। আগেও চায়না কোম্পানিগুলো এরকমটিই করতো। চায়না কোম্পানিগুলো আরও কম দামে একই ধরনের পণ্য বাজারজাত করাতে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে এসে স্যামসাং কে এই পথ থেকে সরে আসতে হয়। আরেকটা বিষয় সকলকে জানিয়ে রাখি যে, জাপানি ভালোমানের ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিগুলোও শুরুর দিকে পঞ্চাশের দশকের বিশ্বসেরা আমেরিকান ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিগুলোর পণ্য নকল করে বাজারজাত করত। বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে স্যামস্যাংয়ের পরিচিতি মূলত ‘ইলেকট্রনিকস জায়ান্ট’ হিসেবেই। অথচ প্রতিষ্ঠার প্রথম তিন দশকে স্যামসাং ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনে তেমন কোনো বিনিয়োগই করেনি। মূলত ষাটের দশকের শেষ দিকে স্যামসাং উদ্যোগ নেয় ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনে।
পরবর্তী চিন্তাধারা : চায়না কোম্পানিগুলো একই ধরনের পণ্য স্যামসাং এর চেয়েও কম দামে বাজারে ছাড়ায় এই পথ থেকে সরে আসেন স্যামসাং এর চেয়ারম্যান ‘লি কান হি’। ‘লি কান হি’ চেয়েছিলেন জাপানি কোম্পানিগুলোর মতো ‘স্যামসাং’ একটি বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হোক। তাই তিনি নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তির প্রতি মনোনিবেশ করেন। তাই অন্যের পণ্য নকল করা বাদ দিয়ে উদ্ভাবনী গবেষণা কাজে অনেক অর্থ খরচ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু স্যামসাং এর কাছে সে সময় এতো অর্থ ছিল না। তাই স্যামসাং তাদের যে বিভাগগুলো অলাভজনক ছিল সেগুলো বন্ধ করে দেন। এরকম বিভাগ ছিল ৩২টি। বিভাগগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় স্যামসাং এর ৪০% কর্মচারীকে সে সময় ছাটাই করতে হয়। স্যামসাং এর চেয়ারম্যান ‘লি কান হি’ এর পরিকল্পনা অনুযায়ী অপ্রয়োজনীয় সকল খরচ কমিয়ে গবেষণা কাজে সেই অর্থ খরচ করা হয়। পরবর্তীতে স্যামসাং এর প্রকৌশলীরা উদ্ভাবন করতে থাকেন নতুন নতুন প্রযুক্তি ও এর সমন্বয়ে তৈরি করেন নতুন নতুন সব পণ্য। আর বিদ্যমান পণ্যগুলোর আরও উন্নত সংস্করণও বাজারে নিয়ে আসেন তাঁরা। ১৯৮৭ সালে লি মারা গেলে বিরাট এক পরিবর্তন আসে। আগে স্যামসাং গ্রুপের অধীনেই ছিল চার প্রতিষ্ঠান—স্যামসাং, শিনসিজায়ে (ডিপার্টমেন্ট স্টোর), সিজে (খাদ্য, রাসায়নিক দ্রব্য, বিনোদন ও লজিস্টিকস) এবং হানসল (কাগজ ও টেলিযোগাযোগ)। ১৯৯০ সালে চারটি গ্রুপ স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর স্যামসাং মনোযোগ দেয় বিশ্বজুড়ে ইলেকট্রনিকস, বিশেষ করে মুঠোফোন ও সেমি-কন্ডাক্টর পণ্যের বাজারে নিজেদের পরিধি বিস্তৃত করতে।
রাজত্ব দখল : এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি প্রতিষ্ঠানটিকে। কাস্টমারদের একের পর এক বিস্ময়কর ও চোখ ধাঁধানো প্রযুক্তি পণ্য উপহার দিয়ে কাস্টমারদের সহজেই আকৃষ্ট করে ফেলে। যার ফলে বিশ্ব ইলেকট্রনিক্স বাজারে স্যামসাং এর মার্কেট শেয়ার বাড়তে থাকে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। বর্তমানে বাজারের সিংহভাগ শেয়ারই স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের দখলে। ২০০০ সালে আয়ের দিক দিয়ে স্যামসাং পৃথিবীর অন্য সব বাঘা বাঘা ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানিকে পেছনে ফেলে এক নম্বর স্থানটি দখল করে নেয়। ১৯৯৯ থেকেই এর আয় দ্বিগুণ হারে বাড়তে থাকে। ওই সময়ের টেকনোলজি ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে মাইক্রোসফট ইনকর্পোরেশনের পরে স্যামসাং ই ছিল পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লাভজনক প্রতিষ্ঠান। ২০১০ সালে ব্র্যান্ড ভ্যালুর দিক দিয়ে স্যামসাং সারা পৃথিবীতে ১৯তম স্থান দখল করে নেয়। আর সবচেয়ে প্রশংসিত ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির তালিকায় লাভ করে দ্বিতীয় স্থান।
মোবাইল মার্কেট দখল : ১৯৮৮ সালে স্যামসাং প্রথম তাদের মোবাইল ফোন দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে নিয়ে আসে। কিন্তু সে সময় কোরিয়ান আরেক কোম্পানি মটোরোলার জয়জয়কার ছিল। তাদের দখলে ছিল মোবাইল মার্কেটের ৬০ ভাগ। আর স্যামসাং মাত্র ১০ ভাগ মার্কেট দখল করতে পেরেছিল। স্যামসাংয়ের মোবাইল ফোনের মান খুব ভালো না হওয়াতে মার্কেটে ১৯৯০ এর মাঝামাঝিতে স্যামসাং এই সেক্টর থেকে বের হয়ে আসেন এবং শুরু করেন গবেষণা। স্যামসাং ই প্রথম মোবাইলে রঙিন পর্দা, ক্যামেরার ও গেমস খেলা প্রচলন করে। এই অতিরিক্ত সুবিধাগুলো পরবর্তীতে বহুগুণে বৃদ্ধি করে স্যামসাং মোবাইলের চাহিদা। যার ফলে মোবাইল মার্কেটে স্যামসাং এর শেয়ারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। আর কয়েকদিন আগেও নোকিয়া ছিল মোবাইল মার্কেটে মার্কেট লিডার। সেই নকিয়াকে সরিয়ে সারা বিশ্বের মোবাইল মার্কেট দখলে নিয়ে নেয় স্যামসাং। টানা ১৪ বছর নকিয়া মোবাইল বিশ্বে রাজত্ব করলেও স্যমসাং এর কৌশলের কাছে তাদেরকে পরাজিত হতে হয়। গবেষণা সংস্থা ‘স্ট্রাটেজি অ্যানালিটিক্স’ এক রিপোর্টে বলা হয়, ২০১২ সালের প্রথম তিন মাসে স্যামসাং -এর মোবাইল সেট বিক্রি করেছে ৯ কোটি ৩৫ লক্ষ। যার ফলে বিশ্বের মোবাইল ফোন বাজারের ২৪ শতাংশ গিয়েছে তাদের দখলে। সেখানে নোকিয়ার হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়েছে ৮ কোটি ২৭ লক্ষ। ২২.৫ শতাংশ বাজার রয়েছে ফিনিশ সংস্থা নোকিয়ার দখলে। অ্যাপলের দখলে গিয়েছে বাজারের ৯.৫ শতাংশ।
২০১৩ সালে সেরা স্যামসাং :
গবেষণা সংস্থা ‘স্টারকাউন্ট’ ২০১৩ সালে মিডিয়ায় আলোচিত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে থেকে সেরা দশটি ব্র্যান্ডের তালিকা তৈরি করে। এই তালিকা তৈরিতে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার এবং অন্যান্য জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১৩ সালের সেরা ১০ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানের তালিকার ১ নম্বর স্থানটি অর্জন করেছে স্যামসাং। এ বছর একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে ১৬ মিলিয়ন ফলোয়ার পেয়েছে দক্ষিণ কোরীয় এই ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট, যা একে স্টারকাউন্টের টপ-টেন লিস্টে সবার প্রথমে নিয়ে গেছে।
আবারও সেই নকলের অভিযোগ : উপরে কয়েকবার বলেছি স্যামসাং এর শুরুটা হয়েছিল জাপানি ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলোর পণ্য নকল করে বাজারজাতকরণের মাধ্যমে। পরে স্যামসাং সেই পথ থেকে সরে এসে নিজস্ব উদ্ভাবনী গবেষণা শুরু করেন এবং এর মাধ্যমে নতুন নতুন পণ্য বাজারজাত করে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ২০১৩ সালের নভেম্বরে স্যামসাং কে আবারও অ্যাপল এর প্রযুক্তি নকল করার দায়ে অভিযুক্ত করে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি কোর্ট। ক্যালিফোর্নিয়ার এই আদালত জানিয়েছে, ২৬টি নয়- স্যামসাংয়ের ১৩টি স্মার্টফোনের পেটেন্ট নকলের প্রমাণ মিলেছে। এর ফলে এবারের ২৯ কোটিসহ আগের ঘোষিত ৬৪ কোটি মিলে মোট ৯৩ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে স্যামসাংকে। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ চেয়েছে স্যামসাং কর্তৃপক্ষ ।
অ্যাপল–স্যামসাং লড়াই : স্মার্ট কম্পিউটিং জগতে নেতৃত্বদানকারী দুই কোম্পানি অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের মধ্যে আইনী লড়াই শুরু হয় ২০১১ সালে। তখন অ্যাপল তাদের মেধাস্বত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগে স্যামসাংয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। বর্তমানে উভয় কোম্পানি ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশে আইনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু মামলার রায় হয়ে গেছে, তার বেশিরভাগ মামলাতেই অ্যাপলের জয় হয়েছে। ২০১২ সালে স্যামসাং এবং অ্যাপলের মধ্যে সংঘটিত হওয়া পেটেন্ট ট্রায়ালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানিটিকে ১.০৫ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছিলেন।
প্রতারণার অভিযোগ : ২০১৩ সালের এপ্রিলে তাইওয়ানের ‘এইচটিসি’ ফোনের সাথে বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনী কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ করে এইচটিসি কর্তৃপক্ষ। অভিযোগে বলা হয় স্যামসাং কর্তৃপক্ষ এইচটিসি সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য ছড়ানোর উদ্দেশ্যে কিছু ছাত্রছাত্রী নিয়োগ দিয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়। এছাড়া নিজেদের সম্পর্কে ভাল রিভিউ লেখার জন্যও অর্থ খরচের অভিযোগ করে। পরবর্তীতে এই প্রতারণার অভিযোগটি প্রমাণিত হয়। অবশ্য, কোরিয়া থেকে এসে স্যামসাং একাই এই কাজ করতে পারেনি; বরং তাইওয়ানের একাধিক স্থানীয় মার্কেটিং কোম্পানিও এর সাথে জড়িত ছিল যাদের মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান এজন্য মোট ১০০,০০০ ডলার জরিমানা গুনতে যাচ্ছে।
স্যামসাং সম্পর্কিত কিছু অজানা তথ্য : বর্তমানে electronics এর জন্য জনপ্রিয়তা পেলেও এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল ট্রেডিং কম্পনি হিসেবে প্রতিষ্ঠার পরবর্তী তিন যুগ ধরে স্যামসাং security, insurance, textile ইত্যাদি কাজ করেছিল কোরিয়ান শব্দ samsung এর অর্থ হচ্ছে “তিনটি তারা” যা দ্বারা কিছু পাওয়ারফুল বোঝায় লাইফ ইনসুরেন্স ব্যাবসার দিক দিয়ে স্যামসাং এর অবস্থান সারা বিশ্বে ১৪তম! এছাড়াও স্যামসাং জাহাজ নির্মাণের কাজ করে থাকে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে স্যামসাং এর উত্থান ঘটা শুরু হয় ১৯৯০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিতে স্যামসাং এর অবদান সবচেয়ে বেশি।
লি র মৃত্যুর পর স্যামসাং চারটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে : আজ আমরা যেই স্যামসাং কে দেখছি, তার উত্থানের পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাদের কৌশল। প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে কৌশলগত দিক দিয়ে যারা বেশি এগিয়ে তারাই সবচেয়ে সফল। স্যামসাং শুরুর দিকের অন্য প্রতিষ্ঠানের অনুকরণীয় হলেও এখন সেই প্রতিষ্ঠানগুলো স্যামসাংয়ের অনুকরণীয়। সময়োপযোগী, কৌশলী, ও বুদ্ধিদীপ্ত উদ্যোগ গ্রহণের ফলেই সাফল্যের শিখরে পৌছাতে পেরেছে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স।